প্রশাসনের অভিযানে নওগাঁর রাণীনগরের দুটি পৃথক স্থান থেকে সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচির ৩১ টন চাল জব্দ করা হয়েছে।শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত উপজেলার আবাদপুকুর বাজারের কুতকুতিতলা এলাকায় এই অভিযান চালানো হয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ নওশাদ হাসান অভিযান পরিচালনা করে এই চালগুলো জব্দ করেন।
দুইটি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য খাদ্য বিভাগকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাকিবুল হাসান।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ নওশাদ হাসান জানান, গোপন সংবাদ পাওয়ার পর জেলা প্রশাসক ও ইউএনওর সার্বিক নির্দেশনায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। সংবাদের ভিত্তিতে গত বুধবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার পারইল ইউনিয়নের ধোপাপাড়া গ্রামের আশরাফ আলীর বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানে ওই বাড়ি থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৫০ কেজি ওজনের ৩৪ বস্তা ও ১৯ কেজি চালের একটি বস্তা জব্দ করা হয়। চালের বস্তার পাশে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালের সরকারি খালি বস্তা পড়ে ছিল। আর চালগুলো অন্য প্লাস্টিকের বস্তায় প্যাকেট করা ছিল। এসব চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির বিলকৃষ্ণপুর বাজার পয়েন্ট এলাকার হতে পারে। তদন্তের পরই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
অপরদিকে সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচির চাল কয়েকজন ব্যবসায়ী কিনে উপজেলার আবাদপুকুর বাজারের কুতকুতিতলা এলাকায় দুইটি গোডাউনে মজুত করে রেখেছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই গোডাউনে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে আমজাদ মণ্ডলের মার্কেটের ওই দুই গোডাউন থেকে ৫০ কেজির ৪৫৩ বস্তা ও ৩০ কেজির ২২২ বস্তাসহ মোট ২৯ টন ৩১০ কেজি সরকারি চাল পাওয়া যায়। এ সময় গোডাউন থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির বেশ কিছু সরকারি বস্তাও পাওয়া যায়।
অভিযানের সময় চাল ব্যবসায়ী ও গোডাউন মালিকরা পলাতক ছিল। অভিযান শেষে শুক্রবার রাতে চালগুলো জব্দ করে উপজেলা খাদ্যগুদামে মজুত করা হয়েছে। এ সময় ওই এলাকার কার্ডধারী সুবিধাভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, তারা সরকারি কর্মসূচির চাল উত্তোলন করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করেন।তিনি আরও জানান, আবাদপুকুর এলাকাটি জেলার আত্রাই উপজেলা, পাশের বগুড়া জেলার আদমদীঘি ও নন্দীগ্রাম উপজেলা এবং নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার নিকটবর্তী হওয়ায় একটি অসাধু ব্যবসায়ী চক্র বিভিন্ন সময় সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে এই চালগুলো কিনে আবাদপুকুর এলাকায় অবৈধভাবে গোডাউন ভাড়া নিয়ে মজুত করে রেখেছে। পরে এই চালগুলো বেশি দামে খোলা বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করতো ওই চক্রটি। অভিযানের সময় উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক আনিছুর রহমান, উপজেলার একডালা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এএসআই হামিদুল ইসলাম সঙ্গে ছিলেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাকিবুল হাসান জানান, আবাদপুকুর এলাকার কুতকুতিতলায় সরকারি বিতরণকৃত চাল মজুত করা হয়েছে মর্মে জানতে পেরে অভিযান পরিচালনা করা হয়। দিনব্যাপী পরিচালিত অভিযানে বিপুল পরিমাণ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে কাউকে না পাওয়ায় উদ্ধারকৃত চাল জব্দ করা হয়েছে। দ্রুত প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য খাদ্য বিভাগকে বলা হয়েছে। প্রশাসন যেকোনো ধরণের অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে সদা-তৎপর রয়েছে। আগামীতেও অবৈধ মজুতের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন